Currently Empty: $0.00
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ মুহাম্মদ (সা.) শুধু মুসলিমদের নয়, সব যুগের সব মানুষের জন্য ছিলেন সাক্ষাৎ রহমত। বিশ্বমানবতার প্রতি তাঁর অবদানের শেষ নেই। এখানে সংক্ষেপে তাঁর ১০টি অবদানের কথা তুলে ধরছি—
- আল্লাহর ওহি লাভের মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বমানবতাকে মানুষের দাসত্ব ও তাদের গোলামি থেকে একমাত্র শরিকবিহীন আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে গেছেন। এতে করে মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর সবকিছুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। বলাবাহুল্য এটিই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্মান।
- আল্লাহর ওহি লাভের মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বমানবতাকে সব কল্পকথা ও কুসংস্কার এবং সব রকমের মিথ্যা ও প্রতারণার সামনে শির না নোয়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন। অক্ষম প্রতিমা ও অলীক প্রভুদের বন্দি দশা থেকে উদ্ধার করেছেন। মুক্ত করেছেন তিনি সুস্থ বিবেকপরিপন্থী চিন্তাধারার বিশ্বাস থেকে।
- মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বমানবতার চেতনায় ক্ষমা ও উদারতার ভিতগুলোকে সুদৃঢ় করেছেন। পবিত্র কোরআনে খোদ আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ মর্মে ওহি প্রেরণ করেছেন। এদিকে তিনি (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মুসলিমের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসকারী অমুসলিমদের সব অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তাদের জীবন, সন্তান, সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা ঘোষণা করেছেন। তাই তো আজ অবধি মুসলিম দেশগুলোয় ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সসম্মানে জীবনযাপন করতে দেখা যায়। অথচ একই সময়ে বৌদ্ধদের হাতে মিয়ানমারে, হিন্দুদের হাতে ভারতে, ইহুদিদের হাতে ফিলিস্তিনে ও খ্রিস্টানদের হাতে পশ্চিমা দেশগুলোয় তারা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। উদারতার দাবিদার পশ্চিমাদের দেশগুলোয় ইসালামোফোবিয়া ও হেইট স্পিচের শিকার হচ্ছে।
- মুহাম্মদ (সা.) ধর্ম, বর্ণ ও বংশ নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যে বরং এমন উপাদানেরও অভাব নেই, যা পক্ষী ও প্রাণিকুলের প্রতি মায়া-মমতা ও কোমলতা দেখাতেও গুরুত্ব দেয়। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এদের অকারণে কষ্ট প্রদান কিংবা এদের প্রতি বিরূপ আচরণকে।
- মুহাম্মদ (সা.) তাঁর অগ্রবর্তী সব নবীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল চিত্র উপস্থাপন করেছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন নবী ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা (আ.) প্রমুখ নবী-রাসুল। উপরন্তু তাঁর প্রতি আল্লাহ তায়ালা এ মর্মে বাণীই প্রেরণ করেছেন, যে কেউ তাঁদের (আল্লাহর প্রেরিত নবীদের) মধ্যে কাউকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, অথবা তাঁর সম্মানহানি ঘটাবে, সে মুসলিম নয়। কেননা সব নবী ভাই ভাই। তাঁরা সবাই মানুষকে লাশরিক এক আল্লাহর প্রতি ডাকার কাজে সমান।
- নবী মুহাম্মদ (সা.) ছোট-বড় ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার রক্ষা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তার সামাজিক মর্যাদা বা জীবনযাত্রার মানের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেননি। এ ব্যাপারে তিনি চমৎকার একগুচ্ছ নীতিনির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর অন্যতম হলো প্রস্থানের তিন মাস আগে বিদায় হজে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের কিছু বাণী। এতে তিনি মানুষের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানে আঘাত হানাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি এ ভাষণ প্রদান করেন, এমন সময় বিশ্ব যখন ১২১৫ সালে ম্যাগনাকার্টা লিবার্ট্যাটাম, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৯৮ সালের ব্রিটিশ বিল অব রাটইস, ১৭৭৬ সালের আমেরিকান স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭৮৯ সালের ফরাসি ডিক্লারেশন অব হিউম্যান অ্যান্ড সিভিল রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার কথা পৃথিবীবাসী কল্পনাও করেনি।
- মুহাম্মদ (সা.) মানবজীবনে আখলাক তথা সচ্চরিত্রের মান তুলে ধরেছেন অনেক উঁচুতে। মানুষকে তিনি উত্তম আখলাক তথা সচ্চরিত্র এবং তার সহায়ক গুণগুলো বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন তিনি সততা, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে তিনি পিতামাতার সঙ্গে সদাচার এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বহাল রাখতে বলেছেন। জীবনে তিনি এর সফল প্রয়োগও ঘটিয়েছেন। পক্ষান্তরে তিনি অসৎ চরিত্র অবলম্বন থেকে বারণ করেছেন। তিনি নিজে যেমন মন্দ স্বভাব থেকে দূরে থেকেছেন, তেমনি অন্যদেরও এ থেকে সতর্ক করেছেন। যেমন মিথ্যা, ছলনা, হিংসা, জেনা-ব্যভিচার ও পিতামাতার অবাধ্যাচরণ করা। শুধু তাই নয়, এসব থেকে সৃষ্ট সমস্যাবলির প্রতিকারও বলে দিয়েছেন তিনি।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহিপ্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদ (সা.) বুদ্ধি কাজে লাগাতে বলেন। সৃষ্টিজগৎ উদ্ঘাটন ও তার পরিচয় লাভে উৎসাহিত করেন। একে তিনি নেকি তথা পুণ্য কাজ বলে গণ্য করেন। অথচ একই সময়ে অপর সভ্যতাগুলোর জ্ঞানী ও চিন্তানায়করা নির্যাতন ভোগ করছিলেন।
- আল্লাহর ওহি লাভের মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) মানুষের প্রকৃতি ও স্বভাববান্ধব এক দীন নিয়ে আবির্ভূত হন, যা আত্মিক খোরাক ও দৈহিক চাহিদার প্রতি লক্ষ রাখে। পার্থিব কাজ ও আখিরাতের আমলের মধ্যে ভারসাম্য বিধান করে। পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে মানুষের সহজাত বাসনা ও ঝোঁককে। অপরাপর জাতিগুলোর সভ্যতার মতো একে ধ্বংস বা অবদমিত করে না। অন্য জাতিগুলোর সভ্যতায় দেখা যায়, তারা মানুষের প্রকৃতিবিরুদ্ধ মূর্তিপূজার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। ধর্ম-অন্তঃপ্রাণ ও তপস্যানুরাগীদেরকে তাদের প্রাকৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। যেমন বিয়ে-শাদি। বঞ্চিত করেছিল অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের স্বভাবসুলভ মানবিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশের অধিকার থেকে।
- মানবতার কল্যাণে মহানবী (সা.) মানুষের আন্তঃসম্প্রদায়ে ভ্রাতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ নমুনা পেশ করেছিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কোনো মানব সম্প্রদায়ের ওপর অন্য কোনো মানব সম্প্রদায়ের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মূল সৃষ্টি, অধিকার ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান। শ্রেষ্ঠত্ব বিবেচিত হবে কেবল ঈমান ও তাকওয়া তথা বিশ্বাস ও আল্লাহভীতির নিরিখে। তিনি তাঁর সব সঙ্গী-সাহাবিকে দীনের খেদমত করার এবং তাতে সম্পৃক্ত হওয়ার সমান সুযোগ দিয়েছেন। তাই তো তাঁদের মধ্যে আরবদের পাশাপাশি ছিলেন (রোম দেশের) সুহাইব রুমি, (হাবশার) বিলাল হাবশি ও (পারস্যের) সালমান ফারসি রাদিআল্লাহু আনহুম।